খুলনা ব্যুরো : খুলনায় মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশের সোর্স নিহত ও এক এএসআইসহ দুই জন আহত হয়েছে। গ্রেফতারও হয়নি মাদকের সাথে জড়িত চক্রের কোন সদস্য। পুলিশ কমিশনার বলছেন, আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর লবনচরা এলাকার বান্দা বাজারে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে একটি টিম। একজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতে-নাতে ধরার পর তার সন্ত্রাসী বাহিনী এ সময় পুলিশের উপর চাইনিজ কুড়াল, রড ও ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় আহত হন পুলিশের এএসআই মো. এমরান আলী সরদার ও সোর্স মো. শফিকুল ইসলামসহ আরো একজন। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজে আনা হলে পুলিশের সোর্সক মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। নিহত মো. শফিকুল ইসলাম খুলনার ফুলতলার ১৪ মাইল এলাকার মৃত গফুর বিশ্বাসের ছেলে। খুলনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহত এএসআই মো. এমরান আলী সরদার। অপর আহত সোর্সকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার ব্যাপারে কোন তথ্যও দিতে পারেনি পুলিশ।
আহত এএসআই মো. এমরান আলী সরদার বলেন, রাত সাড়ে নয়টার লবনচরা এলাকার বান্দা বাজারে তারা মাদকবিরোধী অভিযান চালান। এ সময় নাম সঠিকভাবে না মনে করতে পারলেও তিনি বলেন, দুলাল নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে তারা গ্রেফতার করেন। এ সময় দুলালের সহযোগীরা ১০ থেকে ১৫ জন ধাঁরালো অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে তাদের উপর হামলা করে।
অপরদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে লাশের অপেক্ষায় থাকা নিহত শফিকুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী মোসা. বিপাশা খাতুন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত শফিকুল ইসলাম বাড়িতে বাজার করে তা পৌঁছে দিয়েই দ্রুত বের হয়ে যান। সে সময় তিনি জিজ্ঞাসা করলে বলেন, দ্রুত বের হতে হবে ফোন আসছে।
একই স্থানে নিহত শফিকুল ইসলামের পাড়াত ভাই বলে একজন জানান, তারা জানত শফিকুল ডিবি পুলিশের সাথে কাজ করে। তার দুটি সন্তানও রয়েছে। তার দুই বিয়ে। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে, আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে আহত আর একজন সোর্স’র পরিচয় দিতে পারেনি তিনি।
তবে গত মঙ্গলবার রাত থেকেই ব্যাপারে এ তথ্য দিতে গড়িমসি করে পুলিশ। ঘটনার তথ্য জানতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, বাইরে আছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্রের কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্রকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি বরং সাংবাদিক পরিচয়ে ম্যাসেজ দেবার পর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসি দক্ষিণের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছে বলে যোগাযোগ করতে বলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসি উত্তর’র সাথে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসি উত্তর ও কোন তথ্য দিতে রাজি হননি এই ব্যাপারে। এমনকি তথ্য দিতে রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট থানা লবনচরার ওসিও।
এদিকে, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে এক ই-মেইল বার্তায় কেএমপি গোয়েন্দা পুলিশ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে অতর্কিত আক্রমণ, পুলিশের ১ (এক) জন সোর্স নিহত ও আহত হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম এসআই(নিঃ) মোঃ বদরুজ্জামানের নের্তৃত্বে লবণচরা থানাধীন দক্ষিণ মোল্লাপাড়া এলাকায় মাদক দ্রব্য উদ্ধার অভিযানে যায়। উক্ত অভিযানের সংবাদদাতা ১) রনি শেখ (৩৫), পিতা-মৃত গণি শেখ, সাং-আটরা পশ্চিম পাড়া, থানা-খানজাহান আলী (কেএমপি) ২) মোঃ শফিকুল ইসলাম, পিতা-মৃত গফুর বিশ্বাস, সাং-উত্তর আলকা, চৌদ্দ মাইল, থানা-ফুলতলা, জেলা-খুলনা এবং ৩) মোঃ মনির হোসেন(২৮), পিতা-মৃতঃ ইসমাইল হোসেন মকবুল, সাং-ফুলতলা, জেলা-খুলনা, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান টিমের সাথে উপস্থিত ছিল। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পায়।
তখন হঠাৎ করে অতর্কিতভাবে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীরা এসে অভিযান টিমের সাথে থাকা সংবাদদাতাদের এলোপাতাড়ি চাইনিজ কুড়াল, ছুরি ও রড দিয়ে আঘাত করে। তাদের অতর্কিত আক্রমণে অভিযান টিমের সাথে থাকা সংবাদদাতা ৩ (তিন) জন আহত হলে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসা মোঃ শফিকুল ইসলাম, পিতা-মৃত গফুর বিশ্বাস, সাং-উত্তর আলকা, চৌদ্দ মাইল, থানা-ফুলতলা, জেলা-খুলনাকে মৃতঃ বলে ঘোষণা করেন। বাকী ২ (দুই) জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এ ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অভিযান টিমের এক পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হয়।
ঘটনার সাথে জড়িত মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারের জোর পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে। সংঘটিত ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে উদঘাটিত। এই সংক্রান্তে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক বাদী হয়ে লবণচরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।